মৃত্যুর পরের জীবন বা আখেরাত। এটা কি প্রমান করা যায়?
যখনি আমরা কোন কিছুর উপস্থিতির সম্পর্কে তর্কে যাই তখন আমরা অই জিনিস বা বিষয় নিয়ে ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। সেগুলো হচ্ছেঃ
১। এটি কি আসলেই আছে না নেই? “ To be or not to be, that is the question”.
২। যদি তা থেকে থাকে, আমাদের কি তা জানা সম্ভব? কোন জিনিস অবশ্যই আমাদের জানার পরিধি বা সামর্থ্যের বাহিরে বিদ্যমান থাকতে পারে।
৩। যদি আমরা জানতে পারি যে তা বিদ্যমান তবে আমরা কি এর সম্পর্কে নিশ্চিত জ্ঞান বা ধারনা অর্জন করতে পারি? আমাদের জ্ঞান বর্তমানে সত্য হতে পারে কিন্তু অনিশ্চত। এটা নিশ্চিত না বলে বলা যেতে পারে “সঠিকতম মত”।
৪।যদি এটা সত্য হয়, এটার কি কোন যৌক্তিক প্রমান বা ব্যাখ্যা আছে যার দ্বারা বোঝা যায় এটা নিশ্চিতভাবে হতে পারে বা ঘটতে পারে? এমন অনেক নিশ্চিত ঘটনা থাকতে পারে যার কোন যৌক্তিক প্রমান দেয়া যায় না।
৫। যদি তার কোন প্রমান থাকে তবে প্রচলিত বিজ্ঞান এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া যায় কিনা? বৈজ্ঞানিক প্রমান ছারাও গ্রহণযোগ্য প্রমানের ব্যবস্থা আছে।
৫ম প্রশ্নটা অতি গুরুত্বপূর্ণ যখন মৃত্যুর পরের জীবন প্রমানের ব্যাপার আসে। আমি মনে করি এটা নির্ভর করে কোন ধরনের প্রমান আপনি গ্রহন করবেন তার উপর। কোন গানিতিক সুত্র বা তত্ত্ব প্রমানের মত করে এটা প্রমান করা যাবে না। এটি কোন জীবের গতিবিধি বা জীবন পরিক্রমা পর্যবেক্ষণের মত কোন বিষয় নয়।কারন আপনি যেই পরীক্ষা বা ব্যাখ্যা করবেন বা করতে চাইবেন বা যে অভিজ্ঞতা আপনি অর্জন করেন বা করবেন তার সবই হচ্ছে মৃত্যুর আগের জীবনের অভিজ্ঞতা। মৃত্যুর পরের জীবনের নয়।
যদি এটি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান করা না যায় তবে এটা গ্রহণ করাটা কি বোকামি হবে? আপনি যদি বিশ্বাস করেন যে বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিত নয় এমন কিছু করা বোকামি তাহলে আপনার এই বিশ্বাসটিও আপনার বিশ্বাসের বিপরীতে যায়। কারন আপনি বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমান করতে পারবেননা যে একমাত্র বৈজ্ঞানিক প্রমানই গ্রহণযোগ্য প্রমান। কারন কোন মতের বৈপরীত্য ওই মতের মাধ্যমে প্রমানের সামর্থ্যের বাহিরে। তাই শুধু বৈজ্ঞানিক প্রমাণই সবকিছু প্রমানের মাধ্যম, এই ধারনা বৈজ্ঞানিক নয়। এটি একটি অন্ধ বিশ্বাস, একটি ধর্ম। কোন ব্যবস্থার বাহিরের কোন কিছুর অবস্থানের বিশ্বাস,ঐ ব্যবস্থার ভিতরে থেকে ঐ ব্যবাস্থার আচরন দেখে, ভুল বলা যায় না। যেমন, গোল্ড ফিস তার অ্যাকুরিয়ামের পানির অবস্থা দেখে তার মানুষ মালিকের অস্তিত নেই এটা বলতে পারে না।
মৃত্যুর পরের জীবনের স্বপক্ষে সবচেয়ে শক্তিশালী যুক্তি হচ্ছে মানুষের শরীরে আত্মার উপস্থিতি। মনের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা বলতে আমরা কি বুঝি? আমরা এটা দেখতে পাই না, অনুভব করি। আর শরীরের উপর এর কার্যকারিতা লক্ষ্য করি। যখন শরীর কার্যক্ষমতাহীন হয় অর্থাৎ Paralyzed হয়, মন তখনও কাজ করতে থাকে। শারীরিক মৃত্যু হতে পারে “total paralysis of the body.” যখন আপনি বক্তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন দূরে নিয়ে যান তখন তার কথা শ্রোতারা শুনতে পায় না কিন্তু তখনো সে বক্তা হিসেবেই থাকে। শরীর হতে পারে আত্মার মাইক্রোফোন।
শরীরের উপর আত্মার নির্ভরতা অনেকটা একটি ড্রাই ডকের উপর একটি জাহাজের নির্ভরতার মতো। জাহাজ উন্মুক্ত সাগরে তৈরি হয় না, ড্রাই ডক এ তৈরি হয়। কিন্তু যখন তা ডক ত্যাগ করে তখন সেটা ডুবে যায় না। স্বাধীন ভাবে ভাসতে এবং চলতে থাকে। শরীর হচ্ছে আত্মার ড্রাই ডক। আপনিই তাকে গড়ে তুলেন, মেরামতের দরকার হলে তা করেন । শারীরিক মৃত্যু হতে পারে শরীর হতে আত্মার ছেড়ে যাওয়া।
যেমন ধরা যাক একটি জ্বলন্ত মোমবাতির কথা। আগুনটি নিভিয়ে দিলে কি আলোটি ধ্বংস হয়ে যায়। না। তা শূন্যে চলে যায়। একস্থান হতে অন্যস্থানে। আত্মার ব্যাপারটিও তাই। অনেকটা শক্তির নিত্যতার সুত্রের মতো।
যারা মৃত্যুর পর আত্মার অক্ষয়তার কথা বিশ্বাস করেন না, তাদের কাছে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। “জীবন” মানে কি? What is life? একজন মৃত মানুষ ও একজন জীবিত মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? কোন বস্তুগত পার্থক্য পাওয়া যায়না। তাও একটা পার্থক্য থেকে যায়। কিছু একটা নেই।কি সেটা? Life- of course. এটা কি জিনিস? এটা কি চোখে দেখা যায়, অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো? তাহলে কেন আপনি “জীবন” এ বিশ্বাস করছেন? যদি আত্মা বলে কিছু না থাকত তবে কোন মানুষের হৃদপিণ্ড অকেজো হওয়ায় যদি মানুষটি মারা যায় তাহলে নতুন একটি হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন করলেই তো তার বেঁচে উঠার কথা। কেন এমনটি হয় না? আপনি হয়তো বলবেন তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হৃদপিণ্ড অকেজো হওয়া থেকে রক্ষা করার কথা।আপনার কথাই যদি ধরি, তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হৃদপিণ্ড সচল করার কি দরকার যদি আত্মা বলে কিছু না থাকে। ডাক্তার তো বলতে পারে "দুই একদিনের মধ্যে আরেকটা নতুন হৃদপিণ্ড আনার ব্যবস্থা করছি। এলে লাগিয়ে দেব পুরোনোটার পরিবর্তে। তখন রোগি আবার সুস্থ হয়ে উথবে।জীবন ফিরে পাবে। " কেন এমনটা হয় না? এমন কিছু কি শুনেছেন? বা দেখেছেন? আপনার ব্রেন এ প্রবলেম থাকলে ত সেটা সরিয়ে আরেকটা ব্রেন লাগিয়ে নিলেই হত যদি আত্মা বলে কিছু না থাকত। তাহলে ব্রেন ক্যান্সার এ মানুষ মারা যেত না। তাই না? কেন এমনটা হয় না??
যারা পরকালে বিশ্বাস করেন না তাদের কাছেও আমার কিছু প্রশ্ন আছে। যেসব প্রশ্নের সদুত্তর আমি কোন নাস্তিকের কাছে আজ পর্যন্ত পাইনি। সেগুলো হচ্ছেঃ
১। যদি আত্মা বলে কিছু না থাকে তাহলে মানুষের কোন জিনিসটা তাকে ভাল মন্দ,উচিত অনুচিত এসব সংজ্ঞায়িত করে?
২।বিবেক কত্থেকে আসে?
৩। যদি পরকাল বলে কিছু না থাকে যেখানে আমাদের ভাল কাজের পুরস্কার এবং মন্দ কাজের শাস্তি দেয়া হবে তাহলে মৃত্যুর পর হিটলার, মাদার তেরেসা এবং একটা কুকুরের মধ্যে পার্থক্য কথায়? কেন আমি ভাল কাজ করব ভাল থাকব যেখানে খারাপ কাজ অথবা অসাদুপায় অবলম্বন করে বেশী অর্থ উপার্জন এবং আয়েশি জীবন যাপন করতে পারি?
৪। একজন স্মাগ্লার অথবা সন্ত্রাসিকে কিভাবে আপনি বুঝাবেন যে সে যা করছে তা খারাপ এবং এতে তার ক্ষতি হতে পারে? (ধরুন আইন সে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে এবং সে বডি গার্ড দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকে, যেটা সচরাচর ঘটছে এখন)
৫। একজন লোক ১০০ টি খুন করে ফাসির শাস্তি পেল র আরেক এক ই শাস্তি পেল ১ টি খুন করে। এটা কি গ্রহণযোগ্য আপনার কাছে? কারন আমি বিশ্বাস করি একমাত্র আল্লাহই পারেন তাকে পরকালে যতবার প্রয়োজন ততবার জীবিত করে মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করাতে। এটাই আমার কাছে যৌক্তিক মনে হয়।
আপনি হয়ত বলবেন আমার যা কিছু কর্ম সে তো নাকি আল্লাহ র ইচ্ছাতে তা হলে আমি তো এই মন্চে পুতুল খেলছি ,আমাকে যা বলা হয়েছে তাই করছি ,এতে আমার দায় ভার আসে কোথায়? হ্যা।আল্লাহ মানুষের সব কিছু নিয়ন্রন করেন। কে কি করবে, কি ভাবছে সবই জানেন। মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ন্রন করেন। কিন্তু একটা জিনিস তিনি মানুষের জন্য স্বাধীন করে দিয়েছেন যা তিনি নিয়ন্রন করতে পারেন কিন্তু করেন না। সেটা হচ্ছে মানুষের চিন্তা বা ইচ্ছা এবং সে অনুযায়ি চেষ্টা। মানুষের চিন্তা, চেষ্টা দেখেই তিনি প্রত্যেকের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করেন এবং পরিবর্তন ও করেন। চিন্তা বা ইচ্ছা স্বাধীন করেছেন বলেই আপনি তাঁর বিরুদ্ধে ভাবতে পারছেন। আপনার চিন্তা বা ইচ্ছা, চেষ্টার উপরই আপনার ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। আর এই কারনেই পবিত্র কোরাআনে মানুষ কে গভীর ভাবে চিন্তা করতে বলা হয়েছে, সৎ চিন্তা করতে বলা হয়েছে, নিয়ত বা ইচ্ছার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে।
হয়ত বলবেন কাল যা পাপ আজ তা পুণ্য বা উল্টো টা ,অনেক উধাহরণ দিতে পারি। ঠিক। এমনটা হতেই পারে। তাই আপনাকে বিচার করা হবে আপনার সময়ের অবস্থা দিয়ে। প্রত্যেককে তার মাপকাঠিতে বিচার করা হবে। আপনার প্রশ্নপত্র অনুযায়ী আপনার পরীক্ষা হবে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




